কিডনি রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে জেনে নেয়া খুবই জরুরী। আপনি যদি কিডনি রোগের লক্ষণ এবং প্রতিকার সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জেনে রাখেন, তাহলে খুব সহজেই আপনি আপনার কিডনির যত্ন নিতে পারবেন। কিডনি রোগের লক্ষণ এবং প্রতিকার সম্পর্কে এই আর্টিকেলটিতে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
কিডনি রোগের লক্ষণ
কোন কারনে যদি আপনার কিডনির রোগ হয় বা কিডনি ড্যামেজ হয়ে যায়, সেক্ষেত্রে বিশেষ কিছু লক্ষণ প্রকাশ পায়। এই লক্ষণ গুলোর সাহায্যে খুব সহজেই বুঝে নিতে পারবেন যে আপনার সমস্যা রয়েছে কিনা! যদি কিডনিতে সমস্যা থাকে, তাহলে নিম্ন বর্ণিত লক্ষণ গুলো প্রকাশ পেতে পারে।
তাই যদি আপনার নিম্ন বর্ণিত লক্ষণ গুলোর কোন একটি লক্ষণ দেখা দেয়, তাহলে অবশ্যই আপনাকে যত দ্রুত সম্ভব তাদের সাথে যোগাযোগ করে পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে। কেননা যদি আপনি দীর্ঘদিন যাবত এই লক্ষণ গুলো দেখার পরেও ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ না করেন, তাহলে পরবর্তীতে রোগ খুবই জটিল আকার ধারণ করতে পারে। তাই রোগের প্রাথমিক অবস্থায় চিকিৎসা করাই উচিত। যাই হোক, চলুন দেখে নেয়া যাক, কিডনি রোগের লক্ষণসমূহ।
- অবসাদ: কিডনি রোগে আক্রান্ত হলে যে সকল লক্ষণ প্রকাশ পায়, তার মধ্য থেকে অন্যতম একটি হলো অবসাদ। কিডনি রোগে আক্রান্ত হলে অবসাদ খুবই কমন একটি সমস্যা। দীর্ঘদিন থেকে যদি আপনার এই ধরনের সমস্যা থাকে, তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।
- শরীর ফুলে যাওয়া: কিডনি জনিত সমস্যার কারণে সারা শরীর ফুলে যেতে পারে। অস্বাভাবিকভাবে যদি আপনার শরীর ফুলের মত সমস্যা দেখা দেয়, তাহলে আপনার কিডনি চেকআপ করে নিতে হবে। কিডনির সমস্যা হলে বিশেষ করে দুই পা অত্যধিক পরিমাণে ফুলে যায়।
- অতিরিক্ত প্রস্রাব হওয়া: মাত্রাতিরিক্ত প্রস্রাব হওয়া কিডনি রোগের আরেকটি লক্ষণ। তাই আপনার যদি অতিরিক্ত পরিমাণে প্রস্রাব হয় সেক্ষেত্রে অবশ্যই ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে। কেননা অতিরিক্ত পরিমাণে প্রস্রাব হওয়া কিডনি সমস্যার অন্যতম একটি কারণ।
- প্রস্রাবের রং পরিবর্তন হওয়া: খুব দ্রুত পাল্টে যায় অর্থাৎ প্রস্তাবের রং সাধারণত হলুদ তবে সেই রং গাঢ় হলুদ কিংবা লাল আকার ধারণ করলে অবহেলা না করে যত দ্রুত সম্ভব ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত, কেননা এটি কিডনি রোগে অন্যতম একটি লক্ষণ।
- উচ্চ রক্তচাপ: কিডনি জনিত সমস্যা দেখা দিলে উচ্চ রক্তচাপের মত সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই আপনি যদি দীর্ঘদিন যাবত উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায় ভুগে থাকেন সেক্ষেত্রে কিডনি পরীক্ষা করে নেওয়া ভালো।
- বমি বমি ভাব ও বমি: কিডনির সমস্যা দেখা দিলে বমি বমি ভাব এবং বমি হতে পারে। তাই যদি দীর্ঘদিন যাবত এই ধরনের সমস্যা দেখা দেয় তাহলে অবশ্যই আপনাকে ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে। কেননা এটি কিডনি রোগের অন্যতম আরেকটি লক্ষণ।
- শ্বাস প্রশ্বাসে কষ্ট হওয়া: কিডনি জনিত সমস্যা থাকলে কখনো কখনো শ্বাস প্রশ্বাসে কষ্ট হতে পারে। কিডনি সমস্যার অন্যান্য লক্ষণ সমূহের সহিত যদি শ্বাসকষ্টের সমস্যা দেখা দেয় সে ক্ষেত্রে অবশ্যই উপযুক্ত চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে।
কিডনি ভালো আছে কিনা বোঝার উপায়
কিডনি ভালো আছে কিনা তা বোঝার বিশেষ কিছু উপায় রয়েছে। নিচে কিডনি ভালো আছে কিনা তা বোঝার সম্ভাবনা উল্লেখ করা হলো। নিম্ন বর্ণিত লক্ষণ গুলো যদি আপনার মাঝে থাকে তাহলে ধরে নিতে হবে যে আপনার কিডনি ভালো রয়েছে। আর নিম্ন বর্ণিত লক্ষণ গুলোর কোন একটি যদি আপনার মাঝে না থাকে, তাহলে বুঝে নিতে হবে যে আপনার কিডনিতে সমস্যা রয়েছে।
- নিয়মিত প্রস্রাব হওয়া: আপনার যদি নিয়মিত প্রস্রাব হয় এবং প্রস্রাবে কোন ধরনের কষ্ট না হয় তাহলে ধরে নিতে হবে যে আপনার কিডনি সুস্থ সবল রয়েছে। সুতরাং দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই।
- প্রস্রাবের রং পরিবর্তন না হওয়া: কিডনির সমস্যা দেখা দিলে প্রস্রাবের রং এর পরিবর্তন ঘটে। তাই যদি আপনার প্রস্রাবের রঙে কোন ধরনের পরিবর্তন না ঘটে তাহলে অবশ্যই আপনাকে নিয়ে সুস্থ ও সবল রয়েছে।
- শরীরে পানি শূন্যতা দেখা না দেওয়া: শরীরে যদি ডিহাইড্রেশন বা পানি শূন্যতার মতো সমস্যা ঘন ঘন দেখা দেয়, তাহলে তা হতে পারে কিডনির সমস্যার কারণে। তাই এ ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হলে ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত।
- কোলেস্টেরলের লেভেল ঠিক থাকা: আপনার রক্তে যদি কোলেস্টেরলের মাত্রা ঠিক থাকে এবং কোন ধরনের সমস্যা দেখা দেয় তাহলে ধরে নিতে পারেন যে আপনি সুস্থ রয়েছেন এবং আপনার কিডনিতে কোন ধরনের সমস্যা নেই।
- ওজন ঠিক থাকা: কিডনির সমস্যা হলে দ্রুত ওজন কমে যায় যদি আপনার দ্রুত ওজন কমার মত এই ধরনের কোন সমস্যা দেখা না দেয় তাহলে নিশ্চিত থাকতে পারেন যে আপনার কিডনি জানিত কোন সমস্যা নেই।
কিডনি রোগের ঔষধের নাম
আপনি যদি কখনো কিডনি রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েন, সেক্ষেত্রে অবশ্যই আপনাকে ডাক্তারের পরামর্শ করে ঔষধ সেবন করতে হবে। যত দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শে ঔষধ খাবেন, তত দ্রুত সুস্থ হতে পারবেন। পক্ষান্তরে যদি আপনি উপযুক্ত সময়ে যথাযথ চিকিৎসা না করেন, তাহলে কিন্তু পরবর্তীতে বিভিন্ন ধরনের জটিল সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন।
আর কিডনি যেহেতু একটি বিষয় তাই কিডনি রোগের চিকিৎসা করাতে গেলে অবশ্যই আপনাকে অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে। তাই কিডনি রোগের জন্য ওষুধ সেবন করার জন্য ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করুন। নিচে কয়েকটি কিডনি রোগের ঔষধের নাম তুলে ধরা হলো।
- Calcium Citrate + Calcitriol
- Cod Liver Oil
- Cyanocobalamin
- Levocarnitine
- Roxadustat
- Tolvaptan
কিডনির পয়েন্ট কত হলে ভালো
আপনার কিডনির পয়েন্ট কত তার উপরে নির্ভর করবে আপনার কিডনি সুস্থ আছে কিনা! যদি আপনার সুস্থ থাকে তাহলে কিডনির পয়েন্ট ভালো থাকবে। পক্ষান্তরে যদি আপনার কিডনিতে কোন ধরনের সমস্যা থেকে থাকে, তাহলে কিডনির পয়েন্ট কম থাকবে। আর তাই কিডনির সমস্যা রয়েছে কিনা তা জানার জন্য কিডনির পয়েন্ট পরীক্ষা করাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণত একজন সুস্থ মানুষের কিডনির পয়েন্ট হল 90 mL/min বা এর উপরে।
কিডনি ড্যামেজের লক্ষণ
বিভিন্ন কারণবশত কখনো কখনো কিডনি ড্যামেজ হয়ে যেতে পারে। যদি কোনো কারণে আপনার কিডনি ড্যামেজ হয়ে যায় তাহলে নির্দিষ্ট লক্ষণের ভিত্তিতে তা নির্ণয় করা সম্ভব। কিডনি ড্যামেজের যে সকল লক্ষণ রয়েছে সেগুলো নিচে বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করা হলো।
- পিঠে অধিক ব্যথা হওয়া: আপনার পিঠে যদি দীর্ঘদিন থেকে ব্যথা অনুভূত হয় তাহলে তা হতে পারে কিডনির ড্যামেজের লক্ষণ। কেননা কিডনি ড্যামেজ হলে এই ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই দীর্ঘদিন যাবত এই ধরনের সমস্যা থাকলে অবশ্যই আপনাকে কিডনি পরীক্ষা করে নিতে হবে যে কোন সমস্যা রয়েছে কিনা।
- অতিরিক্ত পরিমাণে ওজন কমে যাওয়া: ক্রমাগতভাবে যদি আপনার শরীরের ওজন কমে যেতে শুরু করে তা কিন্তু বিপদজনক। কেননা অতিরিক্ত পরিমাণে ওজন কমে যাওয়া কিডনি ড্যামেজের অন্যতম একটি লক্ষণ।
- মুখে দুর্গন্ধ হওয়া: দীর্ঘদিন থেকে যদি আপনার মুখ অত্যধিক পরিমাণে দুর্গন্ধযুক্ত হয় এবং বারবার দাঁত পরিষ্কার করার পরেও এই গন্ধটি দূর না হয় সেক্ষেত্রে আপনাকে সাবধান হতে হবে। কেননা এটি কিডনি ড্যামেজ হওয়ার অন্যতম একটি লক্ষণ।
- ত্বকের রং পরিবর্তন হওয়া: আপনার শরীরের ত্বকের রং যদি পরিবর্তিত হয়ে যায় তাহলে তা হতে পারে কিডনি ড্যামেজের কারণে হয়েছে। তাই ত্বকের রং পরিবর্তন হলে অবশ্যই আপনাকে ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।
- পা ফুলে যাওয়া: কিডনির সমস্যা দেখা দিলে যে সকল লক্ষণ প্রকাশ পায়, তার মধ্যে অন্যতম ও প্রধান একটি লক্ষণ হল পা ফুলে যাওয়া। কিডনির সমস্যার কারণে পায়ে অতিরিক্ত পরিমাণে পানির জমে যায় ফলে পা ফুলে যায়।
কিডনির ব্যথা কোথায় হয়
কিডনি পেটের নিম্ন অংশে ডান এবং বাম পাশে অবস্থিত। তাই যদি আপনার কিডনি জনিত কোন সমস্যা দেখা দেয়, সেক্ষেত্রে পেটের নিচের দিকে ডানে অথবা বামে ব্যথা অনুভূত হতে পারে। তবে পেটের উভয় দেখে ব্যথা সাধারণত দেখা দেয় না।
তবে যদি পেটের উভয় দিকেই ব্যথা অনুভূত হয় সেক্ষেত্রে তার জটিল অবস্থার লক্ষণ। তাই এই ধরনের সমস্যা দেখা দিলে অবশ্যই আপনাকে তৎক্ষণাৎ ডাক্তারের পরামর্শে উপযুক্ত চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে।
নষ্ট কিডনি ভালো করার উপায়
আপনার কিডনিতে যদি সমস্যা থাকে আমার আপনার কিডনির কার্যক্ষমতা যদি কমে যায় সে ক্ষেত্রে আপনাকে, নষ্ট কিডনি ভালো করার উপায় সমূহ সম্পর্কে জানতে হবে। আর্টিকেলটির এই অংশে নষ্ট কিডনি ভালো করার কার্যকর উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হলো।
- পর্যাপ্ত পানি পান করুন: আপনি যদি প্রাকৃতিকভাবে কিডনি সুস্থ রাখতে চান, সে ক্ষেত্রে অবশ্যই আপনাকে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করতে হবে। পর্যাপ্ত পানি পান করলে কিডনি সুস্থ থাকে।
- লবণ খাওয়া কমিয়ে দিন: অতিরিক্ত পরিমাণে লবণ খেলে তা কিডনির জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে। তাই যদি আপনি সুস্থ রাখতে চান তাহলে অবশ্যই আপনাকে পরিমিত পরিমাণে লবণ খেতে হবে এবং অতিরিক্ত লবণ খাওয়া সম্পূর্ণরূপে পরিহার করতে হবে।
- নিয়মিত ব্যায়াম করুন: কিডনি সুস্থ থাকার একটি কার্যকর উপায় হল নিয়মিত ব্যায়াম করা। আপনি যদি নিয়মিত ব্যায়াম করেন, তাহলে আপনার কিডনি সুস্থ থাকবে এবং আপনার সমস্যা দেখা দিবে না। তাই নিয়মিত ব্যায়াম করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
- ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে রাখুন: কিডনি সুস্থ রাখতে চাইলে অবশ্যই আপনাকে ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। আপনি যদি ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে না রাখেন, তাহলে কিন্তু আপনার ঝুঁকি থাকবে, তাই ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণ করুন, কিডনি সুস্থ রাখুন।
- ধূমপান পরিহার করুন: ধূমপান করা কিডনি রোগের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ। তাই অবশ্যই আপনাকে সম্পূর্ণরূপে ধূমপান ছেড়ে দিতে হবে। আপনি যদি ধূমপান ছেড়ে না দেন তাহলে কিডনির সমস্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাবে এবং ঔষধের কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে যাবে।