ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ হলো: অতিরিক্ত জ্বর, প্রচন্ড মাথা এবং ত্বকে র্যাশ ওঠা। এই লক্ষণ গুলো ছাড়াও আরো বেশ কিছু লক্ষণ রয়েছে। নিচে ত্বকে ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হবে। তাই ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে যদি আপনি বিস্তারিত জেনে নিতে চান, তাহলে এর সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।
ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার
যদিও ডেঙ্গুর প্রকোপ বৃদ্ধি পায় জুলাই থেকে অক্টোবরের মধ্যে, তবে সারা বছর এই ডেঙ্গুর সমস্যা অব্যাহত থাকে। আর তাই সারা বছর ডেঙ্গু থেকে সতর্ক থাকা উচিত। যাইহোক কোন কারনে যদি আপনি ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েন, সেক্ষেত্রে তা বোঝার কিছু উপায় রয়েছে।
ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ সমূহ যদি প্রকাশ পায় তাহলে যত দ্রুত সম্ভব আপনাকে ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়ে চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে। ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে এই আর্টিকেলটিতে বিস্তারিত আলোচনা তুলে ধরা হবে। আশা করি নিম্ন বর্ণিত তথ্যগুলো মনোযোগের সাথে পড়লে, ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে পারবেন।
ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ | ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ
ডেঙ্গু জ্বর এবং সাধারণ জ্বরের মধ্যে বিস্তর পার্থক্য বিদ্যমান। তাই সাধারণ জ্বর থেকে ডেঙ্গু জ্বর আলাদা করতে চাইলে অবশ্যই আপনাকে নিম্ন বর্ণিত লক্ষণগুলো জেনে রাখতে হবে। যদি আপনি ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ সমূহ জেনে রাখেন, তাহলে খুব সহজেই সাধারণ জ্বর থেকে ডেঙ্গু জ্বর আলাদা করতে পারবেন। তো চলুন তাহলে দেখে নেয়া যাক, ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ সমূহ।
- হঠাৎ অতিরিক্ত জ্বর হওয়া: ডেঙ্গু জ্বরের ক্ষেত্রে জ্বরের প্রকোপ অত্যধিক মাত্রায় বৃদ্ধি পাবে। অর্থাৎ জ্বর মাত্রাতিরিক্ত পরিমাণে বেড়ে যাবে। যদি নরমাল জ্বরের চেয়ে জ্বরের প্রকোপ অত্যধিক পরিমাণে বৃদ্ধি পায়, তাহলে অবশ্যই আপনাকে পরীক্ষা করে নিতে হবে যে, ডেঙ্গু জ্বর হয়েছে কিনা।
- প্রচন্ড মাথা ব্যথা: সাধারণ জ্বরেও মাথা ব্যথা থাকে তবে ডেঙ্গু জ্বরের মাথাব্যথা সাধারণ জ্বরের মাথা ব্যথার চেয়ে তীব্র এবং যন্ত্রণাদায়ক। তাই যদি আপনার মাথাব্যথা নরমাল জ্বরের মাথা ব্যাথার চেয়ে অধিক হয়, সেক্ষেত্রে ডেঙ্গু জ্বর পরীক্ষা করে দেখতে হবে।
- চোখের নিচে ব্যাথা: ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হলে চোখের নিচে অত্যধিক পরিমাণে ব্যথা অনুভূত হয়। তাই জ্বরের সময় যদি এই ধরনের লক্ষণ প্রকাশ পায় সেক্ষেত্রে তা হতে পারে ডেঙ্গু জ্বর।
- জয়েন্টে এবং হাড়ে ব্যথা: ডেঙ্গু জ্বরের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ও প্রধান লক্ষণ হল জয়েন্টে এবং হাড়ে ব্যথা হওয়া। ডেঙ্গু জ্বর হলে শরীরের যত জয়েন্ট রয়েছে সেগুলোতে খুবই ব্যথা অনুভূত হয়। হাড় সহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ব্যাথা ছড়িয়ে পড়ে। সুতরাং এই ধরনের লক্ষণ প্রকাশ পেলে অবশ্যই আপনাকে সতর্ক থাকতে হবে এবং চেকআপ করে নিতে হবে।
- অবসাদ: ডেঙ্গু জ্বর হলে রোগী একেবারে অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়ে এবং অত্যধিক পরিমাণে দুর্বল হয়। কেননা ডেঙ্গু জ্বরের অন্যতম একটি লক্ষণ হল অবসাদ।
- বমি: ডেঙ্গু জ্বর হলে কখনো কখনো বমির মত সমস্যা দেখা দিতে পারে। অত্যাধিক পরিমাণে জ্বর প্রচন্ড মাথা ব্যথা সহ যদি বমির সমস্যা থাকে সেক্ষেত্রে তা হতে পারে ডেঙ্গু জ্বরের কারণে।
- ত্বকে র্যাশ ওঠা: ডেঙ্গু জ্বর হলে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ এবং সম্পূর্ণ আলাদা ধরনের লক্ষণ হল শরীরে র্যাশ ওঠা। তাই প্রচন্ড জ্বর ওঠার পাশাপাশি শরীরে এই ধরনের র্যাশ উঠলে আপনি নিশ্চিত থাকতে পারেন যে আপনার ডেঙ্গু জ্বর হয়েছে। তাই এই ধরনের লক্ষণে যত দ্রুত সম্ভব আপনাকে ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়ে উপযুক্ত চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে।
- দাঁতের মাড়ি বা নাক দিয়ে রক্তঝরা: ডেঙ্গু জ্বরের আরেকটি লক্ষণ হলো দাঁত এবং নাক দিয়ে রক্ত ঝরা। সুতরাং এই ধরনের লক্ষণ প্রকাশ পেলে ঘরে বসে না থেকে উপযুক্ত চিকিৎসা গ্রহণ করুন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধ ও প্রতিকার
ডেঙ্গু জ্বর প্রতিরোধের বেশ কিছু উপায় রয়েছে, সেই উপায়গুলো অবলম্বন করলে আশা করা যায় আপনি ডেঙ্গু জ্বর থেকে নিজেকে নিরাপদ রাখতে পারবেন। তো চলুন তাহলে দেখে নেয়া যাক, ডেঙ্গু রোগ প্রতিরোধ করার কার্যকর উপায় সমূহ।
- জমিয়ে রাখা পানি নির্দিষ্ট সময় পর পর ফেলে দিন: বাড়ির আশেপাশে ভাঙ্গা ফুলের টপ নারকেলের খোসা কিংবা অন্য যেকোনো পরিত্যক্ত পাত্রে পানি থাকলে তা ডেঙ্গু মশার স্থলে পরিণত হতে পারে। আর তাই অবশ্যই আপনাকে বাড়ির আশেপাশে থাকা জমা পানি নির্দিষ্ট সময় পর পর ফেলে দিতে হবে, যেন সেখানে ডেঙ্গু মশা আবাসস্থল গড়ে তুলতে না পারে এবং বংশবিস্তার করতে না পারে।
- মশা নিরোধক স্প্রে ব্যবহার করুন: বাজারে বিভিন্ন ধরনের স্প্রে পাওয়া যায়। ডেঙ্গু মশা থেকে নিজেকে সুরক্ষিত রাখার জন্য মশা নিরোধক স্প্রে ব্যবহার করতে হবে। মশা নিরোধক স্প্রে ব্যবহার করলে, তা আপনাকে ডেঙ্গু মশা থেকে নিরাপদ রাখবে। ফলে আপনি ডেঙ্গু রোগ থেকে নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে পারবেন।
- ফুলহাতা পোশাক পরিধান করুন: বাহিরে বের হওয়ার সময় অবশ্যই আপনাকে ফুলহাতা পোশাক পরিধান করতে হবে। কেননা ফুলহাতা পোশাক পরিধান না করলে শরীরের খোলা অংশে ডেঙ্গু মশা কামড় দিতে পারে।
- দিনে বা রাতে মশারি টানিয়ে ঘুমান: দিনে কিংবা রাতে যেকোনো সময় ঘুমানোর পূর্বে অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমাতে হবে। কেননা ডেঙ্গু মশা দিনের বেলাতেও কামড়াতে পারে। তাই অবশ্যই সব সময় আপনাকে সাবধান থাকতে হবে।
- ডোর স্ক্রিন ব্যবহার করুন: ডোর স্ক্রিন ব্যবহার করলে ঘরে মশা প্রবেশ করতে পারবে না। তাই ডেঙ্গু রোগ প্রতিরোধে ডোর স্ক্রিন খুবই কার্যকর ভূমিকা পালন করে থাকে।
- এয়ারকন্ডিশনার ব্যবহার করুন: এয়ারকন্ডিশনার ব্যবহার করলে রুম সর্বদা বন্ধ থাকে, ফলে বাইরে থেকে মশা কিংবা অন্যান্য যেকোনো ধরনের পোকামাকড় ভিতর প্রবেশ করতে পারে না। তাই এয়ারকন্ডিশনার ব্যবহার করা উচিত।
- বাড়ি এবং এর চারপাশ পরিষ্কার রাখুন: বাড়ি এবং তারা আশপাশ অবশ্যই আপনাকে সর্বদা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে বাড়ি এবং তার আশপাশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন না রাখলে সেখান থেকে ডেঙ্গু মশা বংশবিস্তার করতে পারে, তাই অবশ্যই আপনাকে সতর্ক থাকতে হবে।
ডেঙ্গু জ্বর কত দিন থাকে
ডেঙ্গুজ্বর কত দিন পর্যন্ত স্থায়ী হবে তা নির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব নয়। কেননা কখনো কখনো ডেঙ্গুজ্বর অল্প সময়ের মধ্যেই ভালো হয়ে যায়। আবার দেখা যায় অনেক সময় ডেঙ্গুজ্বর দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। সুতরাং ডেঙ্গু জ্বর কত দিন থাকে তা সম্পূর্ণ নির্ভর করবে রোগের গভীরতার উপর। যাই হোক, সাধারণত ডেঙ্গু জ্বর ২ থেকে ৭ দিন পর্যন্ত স্থায়ী হয়ে থাকে।
ডেঙ্গু জ্বর হলে কি খেতে হবে
ডেঙ্গু জ্বর হলে বেশ কিছু খাবার রয়েছে যেগুলো খাওয়া উচিত। কেননা এই খাবারগুলো খেলে দ্রুত ডেঙ্গুজ্বর থেকে মুক্তি পাবেন। তো চলুন তাহলে দেখে নেয়া যাক, কোন ধরনের খাবার ডেঙ্গু জ্বর নিরাময়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
- তরল জাতীয় খাবার।
- ডাবের পানি।
- কমলালেবু।
- সবুজ শাকসবজি।
- ভাত।
- দই।
- চর্বি বিহীন মাংস।
- হারবাল চা।
- স্যুপ।
ডেঙ্গু রোগের কারণ ও লক্ষণ
ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ সমূহ সম্পর্কে ইতোমধ্যেই উপরে বিস্তারিত আলোচনা তুলে ধরা হয়েছে। তাই আর্টিকেলটির এই অংশের শুধুমাত্র ডেঙ্গু রোগের কারণসমূহ বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করা হলো। ডেঙ্গু রোগের যে সকল কারণ রয়েছে সেগুলো নিম্নরূপ।
- ডেঙ্গুবাহিত মশার কামড়: ডেঙ্গু রোগের প্রধান কারণ হলো ডেঙ্গু জীবাণু বাহিত মশার কামড়।যদি ডেঙ্গু জীবাণুবাহিত মশা কামড় দেয় সেক্ষেত্রে আক্রান্ত ব্যক্তির ডেঙ্গু জ্বর হয়ে থাকে। তবে এটা মনে রাখতে হবে যে, সকল মশার কামড়ে কিন্তু ডেঙ্গু জ্বর হয় না। ডেঙ্গু জ্বর হয় শুধুমাত্র ডেঙ্গুবাহিত মশার কামড়ে।
- ডেঙ্গু মশার ডিমযুক্ত পানি পান করা: ডেঙ্গু মশার ডিম রয়েছে এমন পানি যদি আপনি পান করেন সেক্ষেত্রেও আপনার ডেঙ্গু জ্বর হতে পারে।
- ভাইরাসের মাধ্যমে: ডেঙ্গু ভাইরাস অন্যান্য কোন মাধ্যমে যদি আপনার শরীরে প্রবেশ করে সেক্ষেত্রে আপনার দিনগুলো হতে পারে।
- ভাইরেমিক পর্যায়ে মানুষের থেকে মশার সংক্রমণ: ভাইরেমিক পর্যায়ে আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে মশা কামড় দিয়ে সেই মশা যদি সুস্থ ব্যক্তির শরীরে কামড় দেয় সে ক্ষেত্রে সুস্থ ব্যক্তি ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হতে পারে।
ডেঙ্গু হলে করণীয়
ডেঙ্গু রোগ হলে অবশ্যই আপনাকে বেশ কিছু নিয়ম কানুন যথাযথভাবে পালন করতে হবে। আপনি যদি সেই নিয়ম কানুন গুলো যথাযথভাবে পালন করেন তাহলে দ্রুত সুস্থ হতে পারবেন। পক্ষান্তরে যদি আপনি সেগুলো যথাযথভাবে অনুসরণ না করেন তাহলে, তা আপনার জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে। ডেঙ্গু হলে করণীয় কার্যসমূহ সম্পর্কে নিজে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হলো।
- পর্যাপ্ত পানি পান করুন: ডেঙ্গু জ্বর হলে অবশ্যই আপনাকে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করতে হবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করলে দ্রুত ডেঙ্গু জ্বর থেকে মুক্তি পাবেন।
- বিশ্রাম নিন: ডেঙ্গু জ্বর হলে অবশ্যই আপনাকে বিশ্রাম নিতে হবে। বিশ্রাম না নিলে জ্বর দীর্ঘদিন পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। তাই যদি আপনি দ্রুত সুস্থ হতে চান সে ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশ্রাম নিন।
- উপসর্গ গুলো ভালোভাবে মনিটর করুন: আপনার যে সকল উপসর্গ প্রকাশ পাবে, সেগুলো পরিবর্তন হচ্ছে কিনা বা কত দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে তা ভালোভাবে মনিটর করতে হবে।
- ব্যথা নাশক ঔষধ সেবন করুন: শরীরের ব্যথা থাকলে অবশ্যই আপনাকে ব্যথা নাশক ঔষধ সেবন করতে হবে।
- নিজে নিজে ঔষধ সেবন করা থেকে বিরত থাকুন: ডেঙ্গু জ্বরের সমস্যা দেখা দিলে অবশ্যই আপনাকে রেজিস্টার্ড ডাক্তারের পরামর্শক্রমে ওসব সেবন করতে হবে নিজে নিজে কিংবা হাতুড়ে ডাক্তারের পরামর্শে ঔষধ সেবন করা যাবে না।