You are currently viewing রাসেল ভাইপার সাপ: আতঙ্ক নয় সতর্কতা জরুরী

রাসেল ভাইপার সাপ: আতঙ্ক নয় সতর্কতা জরুরী

রাসেল ভাইপার সাপ বর্তমানে মূর্তিমান আতঙ্কে পরিণত হয়েছে। রাসেল ভাইপার বা চন্দ্রবোড়া সাপ নিয়ে জনমনে যে ভয় তৈরি হয়েছে তা অত্যন্ত উদ্বেগের। ভীত না হয়ে সতর্কতা অবলম্বন করার মাধ্যমে সহজেই আপনি রাসেল ভাইপার সাপ থেকে নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে পারবেন।

রাসেল ভাইপার সাপ কি? এর পরিচয়

রাসেল ভাইপার (Russell’s viper) এই সাপটির বাংলা নাম হলচন্দ্রবোড়া বা উলুবোড়া। অত্যন্ত বিষধর এই সাপটির মূল বাসস্থান হচ্ছে ভারতীয় উপমহাদেশ। “ভাইপারিডি” গোত্রের এই সাপের দৈর্ঘ্যে চার ফুট পর্যন্ত হতে পারে। এবং এই সাপের এর প্রস্থ ৬ ইঞ্চির মত হতে পারে। রাসেল ভাইপার সাপের মাথা কিছুটা চ্যাপ্টা ত্রিভুজ আকার হয়ে থাকে। দেখতে অনেকটা অজগর সাপের মত। শরীরে গোলাকার স্পট থাকে। 

২০১৫ সালে এই রাসেল ভাইপার সাপকে বিলুপ্ত প্রায় প্রাণীর তালিকায় সংযুক্ত করা হয়েছিল। অথচ বিলুপ্তপ্রায় এই সাপটি বর্তমানে ছড়িয়ে পড়েছে দেশের বিভিন্ন জেলায়। ভারতের কিছু অঞ্চল এবং বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় বর্তমানে এই সাপের আনাগোনা বেশ লক্ষণীয়। 

উপরে উল্লেখিত বর্ণনা গুলো যদি কোন সাপের সাথে মিলে যায়, তাহলে ধরে নিতে পারেন সেটি রাসেল ভাইপার সাপ। এই সাপটি কতটা বিষাক্ত? এই সাপ থেকে নিজেকে সুরক্ষিত রাখার উপায় এবং এই সাপে কাটলে কি করতে হবে, সেই বিষয়গুলো সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। 

রাসেল ভাইপার সাপ কতটা বিষাক্ত

রাসেল ভাইপার অত্যন্ত বিষাক্ত একটি সাপ। পূর্ণবয়স্ক একটি রাসেল ভাইপার সাপের বিষের পরিমাণ ১৩০ থেকে ২৫০ মিলিগ্রাম। এই সাপ কামড়ানোর সাথে সাথেই তাৎক্ষণিকভাবে ক্ষতস্থানে অত্যন্ত ব্যথা শুরু হয়ে যায় এবং আক্রান্ত স্থান ফুলে যায়। এবং অত্যন্ত পরিমাণে রক্তক্ষরণ শুরু হয়। 

রাসেল ভাইপার সাপ কামড়ানোর  পরে অতি অল্প সময়ের মধ্যে হার্ট বিট বা হৃদ স্পন্দনের হার আশঙ্কা জনক ভাবে কমে যায়। এবং কিডনি অকার্যকর হয়ে পড়ে। রাসেল ভাইপারের বিষ খুব দ্রুততার সহিত শরীরের লোহিত রক্ত কণিকা গুলো ধ্বংস করে দেয় এবং শরীরের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ গুলোকে খুব দ্রুত আক্রান্ত করে ফেলে। ফলে অল্প সময়ের মধ্যেই রোগী মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে।

  পায়খানার রাস্তায় গোটা, ঘা এবং ব্যথা হলে করণীয়

চন্দ্রবোড়া রাসেল ভাইপার সাপ থেকে বাঁচার উপায়

সাবধানতা অবলম্বন করার মাধ্যমে খুব সহজেই আপনি রাসেল ভাইপার সাপ সহ অন্যান্য যেকোনো ধরনের সাপ নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে পারবেন। যে সকল উপায় অবলম্বন করে চন্দ্রবোড়া রাসেল ভাইপার সাপ থেকে নিজেকে সুরক্ষিত রাখা যেতে পারে সেগুলো নিচে বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। 

  • রিস্কি জায়গায় যাতায়াত পরিহার করুন: যেকোনো ধরনের রিস্কি জায়গায় যাতায়াত সম্পূর্ণ রূপে পরিহার করুন। বিশেষ করে যে সকল জায়গায় সাপের উপদ্রব রয়েছে সেই জায়গাগুলো অবশ্যই আপনাকে সম্পূর্ণরূপে পরিহার করতে হবে। ঘাসযুক্ত স্থান কিংবা মাঠে কাজ করতে গেলে অবশ্যই সাবধান থাকতে হবে।
  • গামবুট এবং গ্লাভস ব্যবহার করুন: ক্ষেত খামারে কাজ করতে যাওয়ার সময় অবশ্যই গ্লাভস এবং গামবুট ব্যবহার করা উচিত। কেননা সাধারণত খাবারের খোঁজে রাসেল ভাইপার সহ অন্যান্য সাপ মাঠে বিচরণ করে থাকে। তাই যে কোন ধরনের অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতি থেকে নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে গামবুট এবং গ্লাভস অতীব প্রয়োজনীয়।
  • হাতে লাঠি রাখুন: রাতে চলাফেরা করার সময় কিংবা মাঠে কাজ করতে যাওয়ার সময় অবশ্যই হাতে লাঠি বা এ জাতীয় কিছু রাখা উচিত। এতে করে যদি আপনি আক্রান্ত হল সেক্ষেত্রে প্রতিরোধ করতে পারবেন। তবে মনে রাখবেন আগ বাড়িয়ে সাপের দিকে তেড়ে যাবেন না, এতে করে সে আগ্রাসী হয়ে উঠতে পারে।
  • রাতে টর্চ লাইট ব্যবহার করুন: রাত্রে চলাচল করার সময় অবশ্যই আপনাকে টর্চ লাইট ব্যবহার করতে হবে। কেননা আপনি যদি অন্ধকারে চলাফেরা করেন তাহলে দ্বারা আক্রান্ত হতে পারেন। 
  • বাড়ির আশপাশ পরিষ্কার রাখুন: বাড়ির আশপাশ সবসময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। বিশেষ করে বড় বড় ঘাস জন্মালে সেগুলোকে ছোট করতে হবে। এছাড়াও যে কোন ধরনের চোখ যার বাড়ির আশেপাশে থাকলে সেগুলো পরিষ্কার করে রাখতে হবে। বাসায় যদি ছোট বাচ্চা থাকে তাহলে অবশ্যই চোখে চোখে রাখবেন। কেননা অনেক সময় তারা বাড়ির পেছনে বা আশেপাশের ঝোপ ঝাড়ে গিয়ে খেলাধুলা করতে পারে।  
  • ইঁদুরের গর্ত বন্ধ করুন: সাপের অন্যতম একটি খাবার হল ইঁদুর। মূলত ইঁদুর শিকার করার জন্যই সাপ বসতবাড়িতে হানা দেয়। তাই বাড়ি সম্পূর্ণ ইঁদুর মুক্ত রাখতে হবে এবং ইঁদুরের গর্ত থাকলে সেগুলো অবশ্যই সম্পূর্ণ রূপেই বন্ধ করে দিতে হবে। সাধারণত ইঁদুর খেয়ে ইদুরের গর্তে সাপ বসবাস করতে শুরু করে, তাই সাবধান থাকতে হবে। 
  • সাপ দেখলে আস্তে করে চলে আসুন: কখনো সাপ দেখলে আপনি তার প্রতি আক্রমণাত্মক না হয়ে ধীরে ধীরে চলে আসুন। তবে যদি দেখতে পান যে সাপ আপনাকে আক্রমণ করতে পারে সে ক্ষেত্রে অবশ্যই লাঠি বা অন্য কোন জিনিস দিয়ে সাপকে প্রতিহত করতে হবে।
  • সাপকে উত্তেজিত করবেন না: কোনভাবেই সাপ নিয়ে খেলা করা যাবে না এবং সাপকে উত্তেজিত করা যাবে না উত্তেজিত হলে তা আক্রমনাত্মক হয়ে উঠতে পারে। তাই অবশ্যই সব সময় সব থেকে দূরে থাকতে হবে এবং সাপের সাথে খেলাধুলা করা যাবে না।
  কিডনি রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার

রাসেল ভাইপার সাপ কাটলে যা করতে হবে

আমাদের সমাজে বিভিন্ন ধরনের কুসংস্কার চালু রয়েছে। এই সকল কুসংস্কারের কারণে অনেক সময় সাপে কাটা রোগীকে সুস্থ করে তোলা অসম্ভব হয়ে পড়ে। সাপে কাটা রোগীকে প্রাথমিক অবস্থাতেই হাসপাতালে নিয়ে গেলে সঠিক চিকিৎসা প্রদানের মাধ্যমে দ্রুত সুস্থ করে তোলা সম্ভব।

পক্ষান্তরে যদি আপনি মুমূর্ষ অবস্থায় রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যান, তখন আসলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তেমন কিছু করার থাকে না। তাই অবশ্যই আপনাকে যত দ্রুত সম্ভব রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। কোন ব্যক্তিকে সাপে কাটলে তৎক্ষণাৎ যে সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে সেগুলো লিস্ট আকারে নিচে তুলে ধরা হলো।

  • শান্ত থাকতে হবে: যদি কখনো আপনাকে কখনো রাসেল ভাইপার সাপ কাটে তাহলে অস্থির হওয়া যাবে না বরং শান্ত থাকতে হয় এবং মানসিকভাবে শক্ত থাকতে হবে। এবং নিম্ন বর্ণিত পদক্ষেপ গুলো গ্রহণ করতে হবে।
  • আক্রান্ত অঙ্গ নড়াচড়া করবেন না: যে স্থানের সাথে কামড় দিয়েছে সে স্থানটি নাড়াচাড়া করা যাবে না যথাসম্ভব স্থির করে রাখতে হবে। বিশেষ করে পায়ে কামড় দিলে হাটাহাটি করা কিংবা ডলাডলি করা সম্পূর্ণ নিষেধ। 
  • ক্ষতস্থানের কাপড় বা জুয়েলারি খুলে ফেলুন: কবরস্থানের আশেপাশে থাকা কাপড় খুলে ফেলতে হবে অথবা কেটে দিতে হবে এবং সেখানে যদি কোন ধরনের জুয়েলারি বা অন্য কোন কিছু থাকে তাহলে সেটিও খুলে ফেলতে হবে। 
  • ক্ষতস্থান সাবান এবং পানি দিয়ে ভালোভাবে ধৌত করুন: ক্ষতস্থান সাবান পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে। বেশ কিছু সময় এই ভাবে পানি দিয়ে ক্ষতস্থান ধুয়ে ফেলতে হবে।
  • ক্ষতস্থান পাতলা সুতি পরিষ্কার কাপড় দিয়ে বেঁধে দিন: পরিষ্কার পাতলা এবং সুতি কাপড় দিয়ে হালকা করে বেঁধে দিতে হবে। খুব বেশি টাইপ করে ক্ষতস্থান বেধে রাখা যাবে না।
  • যতদ্রুত সম্ভব রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যান: আক্রান্ত হওয়ার সাথে সাথেই যত দ্রুত সম্ভব রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। ওঝা, কবিরাজের না হয়ে কিংবা অন্য কোন উপায় অবলম্বন না করে যত দ্রুত ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবেন, রোগীর জন্য তা ততই মঙ্গলজনক হবে।
  ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার জেনে নিন

রাসেল ভাইপার সাপের ছবি

রাসেল ভাইপার সাপের ছবি দেখে খুব সহজেই তার চেনা যেতে পারে। পক্ষান্তরে যদি আপনি রাসেল ভাইপার সাপের ছবি না দেখেন সে ক্ষেত্রে কিন্তু রাসেল ভাইপার সাপ চেনা আপনার জন্য কঠিন হয়ে যাবে। যাইহোক নিচে রাসেল ভাইপার সাপের ছবি তুলে ধরা হল।

Leave a Reply