প্যাসিভ ইনকাম কিভাবে করা যায় জেনে নিন

বর্তমান যুগে শুধুমাত্র চাকরি বা ব্যবসার আয় দিয়ে টিকে থাকা অনেক সময় কঠিন হয়ে পড়ে। আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে আমাদের আয়ের একাধিক উৎস থাকা উচিত। এই প্রেক্ষাপটে প্যাসিভ ইনকাম একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে উঠেছে।

অনেকেই জানতে চান প্যাসিভ ইনকাম কিভাবে করা যায়, কীভাবে শুরু করবেন, কোন মাধ্যমগুলো সবচেয়ে লাভজনক, এবং কোনগুলো দীর্ঘমেয়াদে নিরাপদ। প্যাসিভ ইনকাম কিভাবে করা যায় সে সম্পর্কে এই আর্টিকেলটিতে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হবে।

প্যাসিভ ইনকাম কী?

প্যাসিভ ইনকাম (Passive Income) হচ্ছে এমন এক ধরনের আয়, যেখানে আপনি একবার কাজ করে রাখলে পরে নিয়মিতভাবে সেখানে থেকে আয় পেতে থাকেন, আপনার সরাসরি বা সক্রিয় অংশগ্রহণ ছাড়াই। যেমন: একটি বাড়ি ভাড়া দেওয়া, ব্লগ থেকে অ্যাফিলিয়েট ইনকাম, ইউটিউব ভিডিও থেকে অ্যাডসেন্সের মাধ্যমে আয় ইত্যাদি।

প্যাসিভ ইনকাম কিভাবে করা যায়

প্যাসিভ ইনকাম গড়তে হলে প্রথমেই কিছু বিষয়ের প্রতি মনোযোগ দিতে হবে। প্যাসিভ ইনকাম করার জন্য আপনার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য মধ্যম টি খুঁজে বের করতে হবে এরপরে সময় ও টাকা ইনভেস্ট করতে হবে। তাহলে আসুন, আমরা কিছু উল্লেখযোগ্য প্যাসিভ ইনকামের উপায় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করি।

ইউটিউব চ্যানেল খুলে আয়

বাংলাদেশে ইউটিউব এখন একটি জনপ্রিয় প্যাসিভ ইনকামের উৎস। আপনি যদি কনটেন্ট তৈরি করতে পারেন, যেমন টিউটোরিয়াল, রিভিউ, ভ্লগ বা এনিমেশন ভিডিও, তাহলে খুব সহজেই ইউটিউব থেকে আয় শুরু করা যায়। প্রথমে কিছু ভিডিও তৈরি করে আপলোড করুন এবং নিয়মিত কনটেন্ট প্রকাশ করতে থাকুন। মনিটাইজেশনের শর্ত পূরণ হলে গুগল অ্যাডসেন্সের মাধ্যমে আয় শুরু হবে।

একবার ভিডিও আপলোড করার পর আপনি যদি তা থেকে নিয়মিত ভিউ পান, তবে সেই ভিডিও থেকে মাসের পর মাস, এমনকি বছরের পর বছর আয় হতে পারে। যদিও শুরুতে পরিশ্রম করতে হয়, তবে একবার সেটআপ হয়ে গেলে এটি একটি দারুণ প্যাসিভ ইনকাম সোর্স।

ব্লগিং এবং অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং

যারা লিখতে পছন্দ করেন, তাদের জন্য ব্লগিং একটি আদর্শ প্যাসিভ ইনকাম মাধ্যম। আপনি নিজের একটি ওয়েবসাইট তৈরি করে সেখানে নির্দিষ্ট কোনো বিষয়ে (যেমন: স্বাস্থ্য, প্রযুক্তি, ভ্রমণ ইত্যাদি) ব্লগ লিখতে পারেন।

আপনি যদি কোনো পণ্য বা সার্ভিস সম্পর্কে লিখে সেখানে নির্দিষ্ট অ্যাফিলিয়েট লিঙ্ক যুক্ত করেন, তাহলে পাঠক সেই লিঙ্কে ক্লিক করে পণ্য কিনলে আপনি কমিশন পাবেন। এটি একটি প্যাসিভ ইনকামের শক্তিশালী মাধ্যম।

প্যাসিভ ইনকাম কিভাবে করা যায় ফ্রিল্যান্সিং থেকে

অনেকেই মনে করেন ফ্রিল্যান্সিং শুধুমাত্র অ্যাকটিভ ইনকাম। তবে বাস্তবতা হলো, আপনি ফ্রিল্যান্সিং করতে করতে নিজের ডিজিটাল পণ্য যেমন ই-বুক, ডিজাইন টেমপ্লেট, কোর্স তৈরি করে সেগুলো বিভিন্ন মার্কেটপ্লেসে বিক্রি করতে পারেন। এই পণ্যগুলো থেকে আপনি বারবার আয় পেতে পারেন, যা সত্যিকারের প্যাসিভ ইনকাম।

অনলাইন কোর্স তৈরি করা

আপনি যদি কোনো বিষয়ে ভালো জ্ঞান রাখেন, তাহলে অনলাইন কোর্স তৈরি করে Udemy, Skillshare, Teachable ইত্যাদিতে আপলোড করতে পারেন। শিক্ষার্থীরা সেই কোর্সে এনরোল করলে আপনি এককালীন আয়ের পরিবর্তে বারবার অর্থ পেতে থাকবেন।

এই পদ্ধতি এমন এক ধরনের প্যাসিভ ইনকাম, যেখানে একবার কাজ করে বহুদিন আয় করা যায়। পাশাপাশি এটি আপনার ব্যক্তিগত ব্র্যান্ডিংও তৈরি করতে সাহায্য করে।

প্যাসিভ ইনকাম কিভাবে করা যায় স্টক ইনভেস্টমেন্ট থেকে

বাংলাদেশে এখন অনেকেই শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করে ভালো পরিমাণ প্যাসিভ ইনকাম করছেন। আপনি যদি শেয়ার বাজারের কিছু মৌলিক নিয়ম জানতে পারেন, তাহলে লং টার্ম ইনভেস্টমেন্ট করে ডিভিডেন্ড এবং ক্যাপিটাল গেইনের মাধ্যমে উপার্জন করা সম্ভব।

এখানে অবশ্যই ঝুঁকির বিষয় বিবেচনা করতে হবে এবং কোম্পানি বাছাইয়ের ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।

ফ্ল্যাট বা জমি ভাড়া দেওয়া

রিয়েল এস্টেট বাংলাদেশের অন্যতম নিরাপদ ও দীর্ঘমেয়াদি প্যাসিভ ইনকাম উৎস। যদি আপনার অতিরিক্ত ফ্ল্যাট বা জমি থাকে, তাহলে সেটি মাসিক ভিত্তিতে ভাড়া দিয়ে নির্দিষ্ট সময় পরপর ইনকাম করতে পারেন। এটি বিশেষ করে অবসরপ্রাপ্তদের জন্য আদর্শ পন্থা।

প্যাসিভ ইনকাম কিভাবে করা যায় ড্রপশিপিং ব্যবসা থেকে

ড্রপশিপিং এমন একটি ই-কমার্স মডেল, যেখানে আপনি কোনো প্রোডাক্ট স্টক না রেখেই অনলাইনে ব্যবসা করতে পারেন। ওয়েবসাইটে প্রোডাক্ট প্রদর্শন করে, অর্ডার এলে তা সাপ্লায়ারের কাছ থেকে ক্রেতার কাছে পাঠিয়ে দেন। আপনাকে শুধু মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করতে হয়। সফল হলে এটি অনেক লাভজনক ও স্বয়ংক্রিয় আয় সৃষ্টি করে।

মোবাইল অ্যাপস তৈরি ও বিক্রি

যদি আপনি প্রোগ্রামিং বা অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট জানেন, তাহলে মোবাইল অ্যাপ তৈরি করে গুগল প্লে স্টোরে আপলোড করতে পারেন। ইন-অ্যাপ অ্যাড অথবা সাবস্ক্রিপশন ভিত্তিক সেবা দিয়ে আপনি মাসের পর মাস প্যাসিভ ইনকাম পেতে পারেন।

রকমারি বা অ্যামাজন কিণ্ডল-এ ই-বুক প্রকাশ

লেখালেখি যারা করেন, তাদের জন্য ই-বুক একটি দুর্দান্ত প্যাসিভ ইনকাম মাধ্যম। আপনি যদি বাংলা বা ইংরেজিতে ই-বুক লেখেন, তাহলে তা অ্যামাজনের Kindle Direct Publishing (KDP)-তে আপলোড করতে পারেন। প্রতি বিক্রির উপর আপনি রয়্যালটি পাবেন। এটি একবার লিখে আজীবন আয় পাওয়ার পন্থা।

প্যাসিভ ইনকাম কিভাবে করা যায় ফটো ও ডিজিটাল কনটেন্ট বিক্রি করে

আপনি যদি ফটোগ্রাফি বা ডিজিটাল আর্টের কাজ করেন, তাহলে আপনার ছবি বা ডিজাইন Shutterstock, Adobe Stock, Freepik, Creative Market ইত্যাদি সাইটে আপলোড করে রাখতে পারেন। সেখান থেকে ব্যবহারকারীরা ডাউনলোড করলে আপনি রয়্যালটি পাবেন। এটি একটি সত্যিকার প্যাসিভ ইনকাম সোর্স।

উপসংহার

আজকের প্রতিযোগিতাপূর্ণ অর্থনৈতিক বাস্তবতায় প্যাসিভ ইনকাম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ধারণা। আপনি যদি সময়মত উদ্যোগ নেন, উপযুক্ত মাধ্যম বেছে নেন এবং সঠিকভাবে পরিকল্পনা করে কাজ শুরু করেন, তাহলে কয়েক বছরের মধ্যে আপনি নিজেই নিজের একটি সফল প্যাসিভ ইনকাম সোর্স তৈরি করতে পারবেন।

Leave a Comment