সৌদি আরব মধ্যপ্রাচ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ দেশ যা ইসলামী ঐতিহ্য, আধুনিক অবকাঠামো এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের কারণে বিশ্বব্যাপী পরিচিত। অনেক বাংলাদেশি প্রবাসী এই দেশে কর্মরত রয়েছে, প্রতিনিয়ত বাংলাদেশ থেকে সেখানে শ্রমিক যাচ্ছে আর তাইসৌদি আরব সম্পর্কে জানা আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আজ আমরা আলোচনা করবো সৌদি আরবের প্রশাসনিক বিভাগ নিয়ে বিশেষ করে সৌদি আরবের জেলা কয়টি ও কি কি তা নিচে বিস্তারিত ভাবে তুলে ধরা হবে।
সৌদি আরবের জেলা কয়টি ও কি কি
সৌদি আরবকে প্রশাসনিকভাবে মোট ১৩টি প্রদেশ বা প্রশাসনিক অঞ্চল (Arabic: منطقة، plural: مناطق) বা জেলায় বিভক্ত করা হয়েছে। এই অঞ্চলগুলোকে ইংরেজিতে “Provinces” বা “Regions” বলা হয় এবং প্রতিটি অঞ্চলের নিজস্ব প্রশাসনিক সদরদপ্তর রয়েছে। এই অঞ্চলের নেতৃত্বে রয়েছেন একজন “Governor” যিনি রাজকীয় পরিবারের সদস্য বা রাজা কর্তৃক নিযুক্ত হন।
এই ১৩টি জেলা বা প্রশাসনিক অঞ্চলের নাম হলো:
১. রিয়াদ (Riyadh) ২. মক্কা (Makkah) ৩. মদিনা (Madinah) ৪. আসির (Asir) ৫. নাজরান (Najran) ৬. আল-বাহা (Al-Baha) ৭. আল-কাসিম (Al-Qassim) ৮. জাজান (Jazan) ৯. তাবুক (Tabuk) ১০. হাইল (Hail) ১১. পূর্বাঞ্চল (Eastern Province বা Ash Sharqiyah) ১২. উত্তর সীমানা (Northern Borders) ১৩. আল-জাওফ (Al-Jawf)
রিয়াদ
রিয়াদ সৌদি আরবের রাজধানী এবং সবচেয়ে বড় ও গুরুত্বপূর্ণ জেলা। এই অঞ্চলটি দেশের রাজনৈতিক, প্রশাসনিক এবং অর্থনৈতিক কেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত হয়। এই অঞ্চলে অনেক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান, দূতাবাস ও বড় বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। রিয়াদ শহর এই জেলার সদর দপ্তর। এটি সৌদি আরবের মধ্যস্থলে অবস্থিত।
মক্কা
মক্কা অঞ্চল ইসলামের সবচেয়ে পবিত্র শহর মক্কার জন্য বিশ্বব্যাপী পরিচিত। এই জেলা হজ ও উমরাহর মূল কেন্দ্র, যেখানে প্রতিবছর লক্ষ লক্ষ মুসল্লি ভ্রমণ করেন। মক্কার পাশাপাশি এই অঞ্চলের একটি আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ শহর হলো জেদ্দা, যা বাণিজ্যিক রাজধানী হিসেবে বিবেচিত।
মদিনা
মদিনা মুসলমানদের দ্বিতীয় পবিত্র শহর এবং ইসলামের ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ একটি স্থান। এই অঞ্চলের মধ্যেই মসজিদে নববী অবস্থিত যা নবী মুহাম্মদ (সা.) এর কবর স্থান। মদিনা জেলা ধর্মীয়, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক গুরুত্ব বহন করে।
আসির
আসির অঞ্চলটি সৌদি আরবের দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত এবং এটি পাহাড়ি ও সবুজ অঞ্চল হিসেবে পরিচিত। আবহা এই জেলার রাজধানী। এই এলাকাটি ঠাণ্ডা জলবায়ুর কারণে সৌদিদের গ্রীষ্মকালীন অবকাশযাপনের একটি জনপ্রিয় স্থান।
নাজরান
নাজরান সীমান্তবর্তী একটি জেলা যা ইয়েমেনের কাছে অবস্থিত। এই অঞ্চলটি তার ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্য, সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য এবং কৃষিপণ্যের জন্য পরিচিত। এখানকার জনসংখ্যার একটি বড় অংশ শিয়া সম্প্রদায়ের অন্তর্গত।
আল-বাহা
আল-বাহা একটি ছোট কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ জেলা, যা পাহাড় ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ। এটি পর্যটনের জন্য বেশ জনপ্রিয়। আল-বাহা শহরটি এই অঞ্চলের প্রশাসনিক কেন্দ্র।
আল-কাসিম
আল-কাসিম সৌদি আরবের মধ্যাঞ্চলে অবস্থিত এবং এটি কৃষি উৎপাদনের জন্য প্রসিদ্ধ। বুরাইদা শহর এই জেলার কেন্দ্রবিন্দু। খেজুর উৎপাদনে এই জেলা দেশের মধ্যে অন্যতম। এই জেলা অর্থনৈতিক দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ।
জাজান
জাজান একটি উপকূলীয় জেলা যা ইয়েমেনের কাছাকাছি অবস্থিত। এটি সৌদি আরবের অন্যতম কৃষি অঞ্চল। এই জেলার একটি অংশ হলো ফারসান দ্বীপপুঞ্জ, যা পর্যটনের জন্য বেশ আকর্ষণীয়।
তাবুক
তাবুক জেলা সৌদি আরবের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত। এটি সমুদ্র উপকূলীয় একটি এলাকা এবং সামরিক দিক থেকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নেয়োম (NEOM) নামক ভবিষ্যত শহরের নির্মাণ কাজ এই অঞ্চলে শুরু হয়েছে।
হাইল
হাইল হচ্ছে একটি ঐতিহাসিক জেলা যা ঐতিহ্য, সাহসী উপজাতি ও মরুভূমির সাহিত্যের জন্য পরিচিত। এটি ঐতিহাসিকভাবে কারাভান রুটের কেন্দ্র ছিল এবং এখানকার লোকেরা আতিথেয়তার জন্য বিখ্যাত।
পূর্বাঞ্চল (Ash Sharqiyah)
এই জেলা সৌদি আরবের সবচেয়ে বড় জেলা যা তেল উৎপাদনের জন্য বিশ্বখ্যাত। ধাহরান, আল-খোবার ও দাম্মাম এই অঞ্চলের প্রধান শহর। আরামকো, বিশ্বের সবচেয়ে বড় তেল কোম্পানি, এই অঞ্চলে অবস্থিত।
উত্তর সীমানা (Northern Borders)
এই জেলা মূলত ইরাক সীমান্তবর্তী এবং এখানকার জনসংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম। আরার এই জেলার প্রধান শহর। খনিজ ও কৃষির ওপর নির্ভরশীল এই অঞ্চল দ্রুত উন্নয়নের পথে এগোচ্ছে।
আল-জাওফ
আল-জাওফ সৌদি আরবের সবচেয়ে উত্তরের জেলা। এটি তার প্রাকৃতিক উৎস, জলাভূমি এবং খেজুর উৎপাদনের জন্য পরিচিত। এটি উত্তরাঞ্চলের উন্নয়ন পরিকল্পনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
উপসংহার
সৌদি আরবের জেলা কয়টি ও কি কি আশা করি এই প্রশ্নের সঠিক উত্তর পেয়েছেন। দেশের ১৩টি প্রশাসনিক অঞ্চল বা জেলা কেবল ভৌগোলিকভাবে নয়, বরং অর্থনৈতিক, ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
প্রত্যেক জেলার নিজস্ব বৈশিষ্ট্য আছে, যা সৌদি আরবকে একটি বৈচিত্র্যময় ও শক্তিশালী রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। এই জেলাগুলো সৌদি সরকারের উন্নয়ন পরিকল্পনার মূল স্তম্ভ হিসেবে কাজ করছে। তাই সৌদি আরব সম্পর্কে জানতে হলে এসব জেলার অবস্থান, গুরুত্ব ও বৈশিষ্ট্য জানা অপরিহার্য।