গর্ভধারণ একজন নারীর জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। অনেক নারী মা হওয়ার আগ্রহে প্রতীক্ষায় থাকেন এবং প্রাথমিক লক্ষণগুলো সম্পর্কে জানতে চান। কিন্তু প্রশ্নটি থেকে যায় গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ কত দিন পর বোঝা যায়? সাধারনভাবে গর্ভসঞ্চার হবার এক সপ্তাহ পর থেকে শরীরে কিছু লক্ষণ প্রকাশ পেতে পারে, তবে অনেক নারী এই লক্ষণগুলো বুঝতে দেরি করেন বা ভুল ব্যাখ্যা করেন।
উপস্থাপনা
গর্ভসঞ্চার সাধারণত ডিম্বাণু নিষিক্ত হওয়ার ৬-১২ দিনের মধ্যে জরায়ুতে প্রতিস্থাপন হয়। এই প্রতিস্থাপনের সময় থেকেই শরীরে হরমোনের পরিবর্তন শুরু হয় এবং ধীরে ধীরে গর্ভধারণের লক্ষণ প্রকাশ পেতে থাকে। তাই গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ বোঝার জন্য ৭ থেকে ১৪ দিনের মধ্যে নারীরা প্রাথমিক কিছু পরিবর্তন অনুভব করতে পারেন। তবে এটি নির্ভর করে ব্যক্তিভেদে হরমোনের মাত্রা, স্বাস্থ্যের অবস্থা এবং জীবনযাপনের ধরন অনুযায়ী ভিন্ন হতে পারে।
গর্ভবতী হওয়ার ১ম সপ্তাহের লক্ষণ
গর্ভবতী হওয়ার ১ম সপ্তাহের লক্ষণ সাধারণত খুব সূক্ষ্ম হয় এবং অনেক নারী এটিকে নিয়মিত পিরিয়ড শুরুর পূর্বাভাস হিসেবে ভুল করে থাকেন। এই সময় শরীরে গর্ভধারণ-সম্পর্কিত হরমোন ‘এইচসিজি’ (hCG) তৈরি হওয়া শুরু করে, যা শরীরকে গর্ভাবস্থার জন্য প্রস্তুত করে।
১ম সপ্তাহের কিছু সম্ভাব্য লক্ষণ সমূহ:
- হালকা রক্তস্রাব (Implantation Bleeding): গর্ভধারণের পর ডিম্বাণু যখন জরায়ুতে গিয়ে নিজেকে স্থাপন করে, তখন হালকা রক্তস্রাব হতে পারে। একে ইমপ্লান্টেশন ব্লিডিং বলা হয়। এটি সাধারনত মাসিকের পূর্বে বা সম্ভাব্য তারিখের কাছাকাছি সময়ে হয়ে থাকে এবং রঙ হয় হালকা গোলাপি বা বাদামি। এটি ১-২ দিন স্থায়ী হতে পারে এবং সাধারণত বেশি পরিমাণে হয় না।
- হালকা পেটব্যথা বা ক্র্যাম্প: প্রথম সপ্তাহেই অনেক নারী জরায়ুর নিচে হালকা টান বা ব্যথা অনুভব করেন। এটি অনেকটা মাসিকের সময় হওয়া ক্র্যাম্পের মতো হলেও তুলনামূলকভাবে মৃদু হয়। জরায়ুতে ডিম্বাণুর বসার প্রক্রিয়ার কারণে এই অনুভূতি হয়ে থাকে। কিছু নারী এটিকে মাসিকের পূর্ব লক্ষণ মনে করে বিভ্রান্ত হন।
- স্তনে সংবেদনশীলতা ও ফোলাভাব: গর্ভধারণের পর শরীরে হরমোনের পরিমাণ হঠাৎ করে বেড়ে যায়, বিশেষ করে এস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরনের। এর ফলে স্তন ফুলে যায়, ব্যথা করে বা স্পর্শে সংবেদনশীল হয়ে পড়ে। অনেক নারী অনুভব করেন তাদের স্তনের আকৃতি কিছুটা পরিবর্তিত হচ্ছে এবং নিপলের চারপাশ গাঢ় রঙ ধারণ করছে।
- দুর্বলতা বা অতিরিক্ত ঘুমভাব: গর্ভাবস্থার শুরুতে প্রোজেস্টেরন হরমোনের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় শরীরে ঘুমঘুম ভাব আসে। পাশাপাশি শরীরের রক্তচাপ ও ব্লাড সুগার লেভেল হ্রাস পায়, ফলে অনেক নারী ক্লান্ত ও দুর্বল বোধ করেন। এমনকি প্রতিদিনের স্বাভাবিক কাজেও আলসেমি ও ঘুমে ঢলে পড়ার প্রবণতা দেখা দেয়।
- মেজাজ পরিবর্তন: গর্ভধারণের প্রাথমিক পর্যায়ে নারীদের মেজাজ দ্রুত পরিবর্তিত হয়। কখনো খুব খুশি, আবার কিছুক্ষণের মধ্যেই বিষণ্ণ বা অস্থির মনে হতে পারে। হরমোনের পরিবর্তনের প্রভাবে এই মনোভাব আসে। এটি স্বাভাবিক এবং সময়ের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়ে যায়, তবে প্রিয়জনের সহানুভূতি ও সহায়তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
গর্ভবতী হওয়ার দ্বিতীয় সপ্তাহের লক্ষণ
গর্ভবতী হওয়ার দ্বিতীয় সপ্তাহের লক্ষণ একটু বেশি স্পষ্ট হতে পারে। নিষিক্ত ডিম্বাণু তখন জরায়ুতে বসে যায় এবং ‘এইচসিজি’ হরমোনের পরিমাণ বাড়তে থাকে, ফলে শরীরে নানা ধরনের পরিবর্তন দেখা যায়।
২য় সপ্তাহে দেখা দিতে পারে:
- মর্নিং সিকনেস বা বমি বমি ভাব: গর্ভাবস্থার একেবারে শুরুতেই অনেক নারী সকালে উঠে বমি বমি ভাব বা বমি করতে পারেন, যাকে মর্নিং সিকনেস বলা হয়। তবে এটি শুধু সকালেই নয়, সারাদিনে যেকোনো সময় দেখা দিতে পারে। এই অবস্থার পেছনে মূলত হরমোনের দ্রুত পরিবর্তন দায়ী, বিশেষ করে hCG (human chorionic gonadotropin) হরমোনের মাত্রা বৃদ্ধি।
- গন্ধে অতিসংবেদনশীলতা: ২য় সপ্তাহে গর্ভবতী নারীদের মধ্যে নানা ধরনের গন্ধে অতিসংবেদনশীলতা দেখা যায়। স্বাভাবিকভাবে যেসব গন্ধে তেমন সমস্যা হতো না, সেই গন্ধও এখন বিরক্তিকর বা অসহনীয় হয়ে উঠতে পারে। রান্নাঘরের গন্ধ, পারফিউম, বা রাস্তার ধোঁয়াতেও বমি বমি ভাব হতে পারে। এটি হরমোনের পরিবর্তনের কারণে হয়ে থাকে।
- খাওয়ার রুচিতে পরিবর্তন: এই সময়ে প্রিয় খাবারেও অরুচি আসতে পারে, আবার কিছু অদ্ভুত বা নতুন খাবার খেতে মন চাইতে পারে। কেউ কেউ টক, মিষ্টি বা ঝাল খাবারের প্রতি আকৃষ্ট হন। এটিকে ক্রেভিং বলা হয়। আবার অনেকে আগের পছন্দের খাবার থেকেও বিমুখ হয়ে পড়েন, যাকে ফুড অ্যাভারশন বলে।
- হালকা জ্বর বা শরীর গরম লাগা: হরমোনের পরিবর্তনের ফলে শরীরের তাপমাত্রা সামান্য বেড়ে যেতে পারে। অনেক নারী শরীর গরম লাগা বা হালকা জ্বর অনুভব করেন, যদিও এটি সাধারণত বিপজ্জনক নয়। Basal Body Temperature (BBT) বৃদ্ধি পাওয়া গর্ভধারণের একটি সাধারণ লক্ষণ।
- প্রস্রাবের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া: গর্ভাবস্থার শুরুতেই শরীরে রক্ত প্রবাহ বাড়ে এবং কিডনিও বেশি কাজ করতে শুরু করে। ফলে মূত্র উৎপাদনও বেড়ে যায়। এজন্য ২য় সপ্তাহ থেকেই প্রস্রাবের চাপ বেশি অনুভূত হতে পারে। রাতে বারবার বাথরুমে যাওয়ার প্রয়োজন পড়তে পারে।
- এই লক্ষণগুলো গর্ভধারণের দিকে ইঙ্গিত দেয় এবং পিরিয়ড মিস হওয়ার আগেই বুঝে ফেলা সম্ভব হয় যে আপনি মা হতে চলেছেন।
গর্ভবতী হওয়ার তৃতীয় সপ্তাহের লক্ষণ
গর্ভবতী হওয়ার তৃতীয় সপ্তাহের লক্ষণ আরও সুস্পষ্ট হয়। এই সময়টায় গর্ভে হরমোনের আধিক্য শরীরে বড় ধরনের প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে।
তৃতীয় সপ্তাহে লক্ষণগুলো:
- স্তনের আকারে পরিবর্তন এবং ব্যথা: তৃতীয় সপ্তাহে স্তনের আকার কিছুটা বড় ও ফুলে যেতে পারে। স্তনের টিস্যুগুলোতে হরমোনের প্রভাবে রক্ত চলাচল বেড়ে যায়, ফলে স্তনে ব্যথা, চাপ বা টানটান ভাব অনুভূত হয়। নিপলের চারপাশে (areola) গাঢ় রঙ দেখা দিতে পারে এবং কখনো কখনো চুলকানিও হতে পারে।
- শরীর ক্লান্ত ও দুর্বল বোধ করা: গর্ভাবস্থার শুরুতে শরীর প্রচুর শক্তি ব্যয় করে ভ্রূণের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করে। ফলে শরীরে ক্লান্তি জমে ওঠে এবং দৈনন্দিন কাজের পর খুব দ্রুত দুর্বল বা অবসাদগ্রস্ত মনে হতে পারে। এছাড়া প্রোজেস্টেরন হরমোনের উচ্চমাত্রা ঘুমঘুম ভাব ও অলসতা তৈরি করে।
- মেজাজ হঠাৎ পরিবর্তন (Mood Swings): তৃতীয় সপ্তাহে হরমোনের তারতম্যের কারণে অনেক নারী অল্প কথায় রেগে যান বা হঠাৎ মন খারাপ হয়ে পড়ে। আবার এক মুহূর্তে হাসি, পরমুহূর্তেই কান্না – এই রকম আচরণও হতে পারে। এই মুড সুইং গুলো একদম স্বাভাবিক এবং সাময়িক, তবে পরিবার ও কাছের মানুষের সহানুভূতি এ সময় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
- হালকা তলপেটে চাপ অনুভব করা: জরায়ুতে ভ্রূণের বৃদ্ধি ও হরমোনজনিত পরিবর্তনের কারণে তলপেটে মৃদু চাপ বা ভারী ভাব অনুভব হতে পারে। এটি মাসিকের ব্যথার মতোই অনুভূত হতে পারে, কিন্তু ব্যথার ধরন ও সময় একটু আলাদা হয়। কিছু নারী এই চাপকে দুঃশ্চিন্তার কারণ মনে করলেও এটি সাধারণত বিপদজনক নয়।
- ঘন ঘন প্রস্রাব লাগা: গর্ভাবস্থায় জরায়ু প্রস্রাবথলির উপর চাপ সৃষ্টি করে, ফলে ঘন ঘন প্রস্রাবের প্রয়োজন হয়। তৃতীয় সপ্তাহ থেকেই অনেক নারী লক্ষ্য করেন যে তারা দিনে এবং রাতেও আগের তুলনায় অনেকবার বাথরুমে যেতে হচ্ছে। এটি গর্ভাবস্থার সাধারণ লক্ষণ এবং পানি পানের পরিমাণ ঠিক রেখে চলা উচিত।
অনেক নারী এই পর্যায়ে গর্ভাবস্থার টেস্ট করেন এবং সঠিক ফলাফল পান, কারণ এইচসিজি হরমোন তখন প্রস্রাবে পর্যাপ্ত পরিমাণে উপস্থিত থাকে।
গর্ভবতী হওয়ার ৬ষ্ঠ সপ্তাহের লক্ষণ
গর্ভবতী হওয়ার ৬ষ্ঠ সপ্তাহের লক্ষণ প্রায় নিশ্চিতভাবে গর্ভাবস্থার জানান দেয়। গর্ভের ভ্রূণ তখন দ্রুত বিকাশ লাভ করছে এবং মা’র শরীরে পরিবর্তনের মাত্রাও বেড়ে যাচ্ছে।
এই সপ্তাহে লক্ষণগুলো:
- বমি বা বমি বমি ভাব (বিশেষ করে সকালে): এই পর্যায়ে বমি বা বমি বমি ভাব আরও প্রবল হয়ে উঠতে পারে। অনেকেই সকালে ঘুম থেকে উঠে তীব্র বমির অনুভব করেন। এই লক্ষণটি মর্নিং সিকনেস নামে পরিচিত, তবে এটি শুধু সকালে নয়, সারাদিনেও থাকতে পারে। এটি মূলত hCG হরমোনের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার কারণে ঘটে।
- খাদ্যগন্ধে বমি আসা: এ সপ্তাহে খাদ্যের গন্ধে অতিরিক্ত সংবেদনশীলতা দেখা দেয়। প্রিয় খাবারের গন্ধেও বমি বমি ভাব বা আসলেই বমি হতে পারে। রান্নার গন্ধ, মাংস, ডিম, এমনকি সাধারণ সবজি থেকেও এমন প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। হরমোনের পরিবর্তনের ফলে ঘ্রাণেন্দ্রিয় অনেক বেশি সক্রিয় হয়ে পড়ে।
- একদম পিরিয়ড বন্ধ হওয়া: এটা গর্ভাবস্থার অন্যতম প্রধান ও প্রথম লক্ষণ। নির্দিষ্ট সময়ে মাসিক না হলে এবং অন্যান্য উপসর্গের সঙ্গে মিল থাকলে, তা গর্ভধারণের পরিষ্কার ইঙ্গিত হতে পারে। এ সময় অনেকে ঘরোয়া বা ক্লিনিক্যাল প্রেগনেন্সি টেস্ট করে থাকেন, যেটি ইতিবাচক ফল দিলে গর্ভাবস্থার নিশ্চিততা পাওয়া যায়।
- স্তনে দুধের গ্রন্থি ফুলে ওঠা: এই সময় স্তনে দুধের গ্রন্থি (milk ducts) হরমোনের প্রভাবে বড় হতে শুরু করে, যার ফলে স্তন ভারী ও টানটান লাগতে পারে। নিপলের চারপাশ গাঢ় রঙ ধারণ করে এবং অনেক সময় নিপল স্পর্শে ব্যথা বা অস্বস্তি তৈরি করে। এটি শিশুকে ভবিষ্যতে দুধ খাওয়ানোর জন্য শরীরকে প্রস্তুত করে।
- চুল, ত্বক ও হরমোনে দৃশ্যমান পরিবর্তন: হরমোনের প্রভাবে চুল অনেকের ঝরে পড়তে পারে, আবার কারো চুল ঘন ও চকচকে হয়ে ওঠে। ত্বকে ব্রণ, র্যাশ, বা গ্লো আসতে পারে। কারো কারো ক্ষেত্রে মুখে কালচে দাগ বা pigmentation শুরু হয়। সব মিলিয়ে শারীরিক চেহারায় পরিবর্তন পরিলক্ষিত হতে থাকে।
- অতিরিক্ত ক্লান্তি ও ঘুমভাব: এই সপ্তাহে শরীর অত্যন্ত ক্লান্ত ও দুর্বল অনুভব করতে পারে। কিছু নারী প্রায়ই ঘুমিয়ে পড়তে চান বা সারাদিন অলস ভাব অনুভব করেন। কারণ শরীর তখন অনেক বেশি শক্তি ব্যবহার করছে প্ল্যাসেন্টা গঠনের জন্য এবং ভ্রূণের বিকাশ নিশ্চিত করার জন্য। পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও পুষ্টিকর খাদ্য এই সময় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এই সময়ে একজন গাইনোকোলজিস্টের পরামর্শ নেওয়া উচিত এবং প্রেগন্যান্সি নিশ্চিতকরণ, পুষ্টিকর খাবার খাওয়া এবং জীবনযাপন পদ্ধতি সংশোধন করা শুরু করতে হবে।
পিরিয়ড মিস হওয়ার আগে গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ
অনেক নারী জানতে চান-পিরিয়ড মিস হওয়ার আগে গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ কীভাবে বোঝা যায়। সত্যি বলতে, এই সময়ের লক্ষণগুলো খুব সূক্ষ্ম এবং সাধারণ শরীরিক উপসর্গের মতোই।
পিরিয়ড মিস হওয়ার আগের সম্ভাব্য লক্ষণ:
- ইমপ্লান্টেশন ব্লিডিং: গর্ভধারণের ৬-১২ দিন পর ডিম্বাণু জরায়ুর দেয়ালে বসার সময় হালকা রক্তপাত হতে পারে। এই রক্তপাত সাধারণত খুব হালকা, বাদামি বা হালকা গোলাপি রঙের হয় এবং ১-২ দিন স্থায়ী থাকে। অনেকেই একে অকাল পিরিয়ড বলে ভুল করেন, তবে এটি মাসিকের চেয়ে অনেক হালকা এবং ব্যথাবিহীন হতে পারে।
- হালকা পেট ব্যথা: পিরিয়ডের আগেই অনেকেই তলপেটে টান বা হালকা ব্যথা অনুভব করেন, যা implantation-এর সময় স্বাভাবিক। এটি অনেকটা মাসিকের আগের ব্যথার মতো মনে হতে পারে, তবে তীব্রতা কম এবং এক বা দুই দিন স্থায়ী হয়।
- হরমোনগত কারণে স্তনে চাপ বা ব্যথা: গর্ভধারণের প্রভাবে হরমোন বিশেষ করে প্রোজেস্টেরন ও hCG-এর মাত্রা বাড়তে থাকে, যা স্তনের সংবেদনশীলতা বাড়ায়। ফলে স্তন ভারী লাগে, ব্যথা করে এবং নিপল স্পর্শে সংবেদনশীল হয়। এটি অনেকটাই মাসিকের পূর্ব লক্ষণের মতো, তবে স্থায়িত্ব ও অনুভূতিতে কিছুটা পার্থক্য থাকে।
- ক্লান্তি: এ সময় শরীরের মধ্যে দ্রুত হরমোনের পরিবর্তন ঘটে এবং শরীর গর্ভাবস্থার প্রস্তুতি নিতে শুরু করে, যার ফলে হঠাৎ ক্লান্তি বা শক্তির অভাব অনুভূত হয়। যেকোনো সাধারণ কাজ করতেও বেশি কষ্ট লাগতে পারে এবং বিশ্রামের প্রয়োজন বাড়ে।
- অতিরিক্ত ঘুম বা অলসতা: ঘন ঘন ঘুম পেতে থাকা, চোখ ভারী লাগা, বিছানা ছাড়তে না চাওয়া – এই লক্ষণগুলো অনেকেই উপেক্ষা করেন, কিন্তু এটি একটি প্রাথমিক গর্ভাবস্থার লক্ষণ হতে পারে। প্রোজেস্টেরনের মাত্রা বৃদ্ধির কারণে এই ঘুমভাব দেখা দেয়।
- রুচির পরিবর্তন বা গন্ধে অস্বস্তি: পিরিয়ড মিস হওয়ার আগেই কিছু নারী খাবারের প্রতি অদ্ভুত রুচির পরিবর্তন বা গন্ধ সহ্য না করার সমস্যা অনুভব করেন। রান্নার গন্ধ, পারফিউম, ধোঁয়া বা পরিচিত গন্ধগুলোতে হঠাৎ অস্বস্তি বা বমি বমি ভাব হতে পারে। এটি গর্ভধারণের একেবারে শুরুর দিকেই শুরু হতে পারে।
- এই লক্ষণগুলো থাকলেও, এটি শতভাগ নিশ্চিত নয়। পিরিয়ড মিস হওয়ার পর ১-২ দিনের মধ্যে প্রেগন্যান্সি টেস্ট করলে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ফলাফল পাওয়া যায়।
প্রশ্নোত্তর সমূহ
Q1: গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ কত দিন পর বোঝা যায়? Ans: সাধারনত নিষিক্ত হওয়ার ৭ থেকে ১৪ দিনের মধ্যে শরীরে হালকা পরিবর্তন দেখা দিতে পারে, তবে নিশ্চিত হতে হলে পিরিয়ড মিস হওয়ার ১-২ দিন পর পরীক্ষা করাই ভালো।
Q2: গর্ভবতী হওয়ার ১ম সপ্তাহে কি লক্ষণ দেখা দেয়? Ans: হালকা রক্তস্রাব, স্তনের ব্যথা, ক্লান্তি, পেটব্যথা এবং মেজাজের পরিবর্তন লক্ষণ হতে পারে।
Q3: পিরিয়ড মিস হওয়ার আগেই গর্ভবতী হওয়ার কোনো উপসর্গ থাকে কি? Ans: হ্যাঁ, রুচির পরিবর্তন, হালকা ব্যথা বা বমি বমি ভাব, স্তনের সংবেদনশীলতা এসব লক্ষণ দেখা দিতে পারে।
Q4: প্রেগন্যান্সি টেস্ট কখন করবো? Ans: পিরিয়ড মিস হওয়ার পর অন্তত ১-২ দিন অপেক্ষা করে প্রেগন্যান্সি টেস্ট করলে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ফলাফল পাওয়া যায়।
Q5: গর্ভাবস্থায় ডাক্তারের কাছে কখন যাওয়া উচিত? Ans: প্রেগন্যান্সি নিশ্চিত হওয়ার সাথে সাথেই একজন গাইনোকোলজিস্টের পরামর্শ নেওয়া উচিত, যাতে প্রয়োজনীয় পুষ্টি, ওষুধ ও সঠিক চিকিৎসা শুরু করা যায়।
উপসংহার
গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ কত দিন পর বোঝা যায় এই প্রশ্নের উত্তর নির্ভর করে অনেক বিষয়ের ওপর। কারো ক্ষেত্রে গর্ভধারণের প্রথম সপ্তাহেই কিছু লক্ষণ দেখা দেয়, আবার কারো ক্ষেত্রে তা দ্বিতীয় বা তৃতীয় সপ্তাহে স্পষ্ট হয়। তবে পিরিয়ড মিস হলে এবং উপরের লক্ষণগুলোর মিল থাকলে গর্ভধারণের সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে।
নারী শরীর অত্যন্ত সংবেদনশীল এবং গর্ভাবস্থা একটি বিশেষ পরিবর্তনের ধাপ। তাই যে কোনও সন্দেহ বা লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত একজন চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করা এবং পরীক্ষা করানোই সবচেয়ে উত্তম।